Posts

Showing posts from June, 2020

দেবাঞ্জনের কবিতা (১)...27 th Nov 2017

Image
শংখচিল তিনযুগ পরে পরে আবার মিলেছে চোখ, মাঝে পেরিয়েছে হাজার মাইল পথ। ক্লান্ত পায়েরা অলস পদক্ষেপে, কেন খুঁজে নিল আবার তোমার ঘর! আমি তো চাইনি দেখাতে আমার মুখ! চেয়েছি দেখতে শুধু তুমি আছ কিনা। পরে আজও সেই সাদা পাটভাঙা শাড়ি, করুন গানের সুরে আটকালে পথ ? কালো পাড়-শাড়ী আজও কি তোমার প্রিয়? দলবেঁধে সবে এসেছ যে একই বেশে! নাকি ভেবেছিলে চিনতে করব ভুল, জাননা আমার আঁধারেই যাতায়াত?  লাল ঠোঁটে কেন মিলনের গান গাও! আমিই জানিনা আমার ভবিষ্যৎ। আজ ক্ষনিকের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছাসে, বুকে টেনে নিলে তিনটি যুগের পর? আলতা পায়েতে অতলের আহবান, দাওনা পেরতে উত্তাল জলরাশি। আমার পায়ের ক্লান্তি কি জান তুমি? এনেছে সে তোমাকে দেখতে একটিবার।

দেবাঞ্জনের কবিতা(২)..19th Feb 2018

Image
চৌরঙ্গীতে সন্ধ্যা ------------------------------ ভাষাদিবসের টানে ফিরে আসে, লাল শিমূল। মৌটুসি ফিরে আসে,  পলাশের কুঁড়ির ইশারায়। স্বভাবউদ্ধত বিবর্ণ ফুটপাথের ফাঁকে, সদর্পে উঁকি মারে দূর্বা। বাতিস্তম্ভ বেয়ে নীল আলোর মালা উঠে আসে নিয়নের নিশ্বাসের গন্ধে। সারিবিদ্ধ অট্টালিকার মার্জিত আলোর মালা, উচ্চতায় নিরাপত্তা পায়। ঘরমুখো কেরানী ক্লান্ত পদক্ষেপে, নৈশভোজের টানে। মন্দিরের ঘন্টা বাজে আবহমান ছন্দে, ছন্দেও তার ধূপের গন্ধ। রাজপথের সবুজ সিগনাল মাতোয়ারা হয় ফাল্গুনি হাওয়ার চিরাচরিত আনাগোনায়। তারামণ্ডল খোঁজে আকাশের গায়ে, তারা হয়ে যাওয়া স্বপ্ন। স্বপ্নের শোক কোলে বিচারপ্রার্থী মাতৃমূর্তি, অস্তমিত সূর্যের খোঁজে। তরমুজের রং যদিও লাল, তবু আজও স্বাদ বদলে নোনতা হয়নি। একফালি চাঁদে মেদুর রশ্মিরাগ পৃথিবীর মলিনতা মন্থনের অপেক্ষায়।

যেতে যেতে ২: 25 th Nov 2017

------------------- দু'পাশে ধূ ধূ মরুভূমির মধ্যে দিয়ে ছুটে চলেছে মধ্যপ্রাচ্যের সুপারফাস্ট হাইওয়ে। সবুজ বলে যে কিছু নেই তা নয়। আছে কিছু কাঁটাঝোপ আর বাবলা-জাতীয় গাছ। বাতানুকূল বাসের পর্দা সরিয়ে, আমার চোখ পেরোনোর চেষ্টা করছে দিকচক্রবাল। মনে পড়ে যাচ্ছে 'লরেন্স অফ আরাবিয়া' ছায়াছবির দৃশ্য। এমনই দিগন্ত থেকে একটি কালো বিন্দু দেখা যাচ্ছিল। সেটাই বড় হতে হতে দেখা দিল এক দুর্ধর্ষ ঘোড়সওয়ার, শরিফ আলি। কি দুর্দান্ত অভিনয় করেছিলেন ওমর শরিফ। সেই শরিফ আলির ভূূূমিকায়। ওদিকে সূর্যদেব অস্ত যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একটিও মেঘ এখানে বিদায়বেলায় ওঁকে টা টা করতে আসে না। সময়মত সূর্যকে রঙ বদলে লাল হয়ে যেতে হয়। তারপর জৌলুস হারিয়ে একসময় সে মিলিয়ে যাবে বালিয়াড়ির পেছনে। দিগন্তরেখার  এত কাছ অবধি সূর্য দেখা যায়না আমাদের দেশে। তারপরই বইতে থাকে ঠান্ডা বাতাস। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। আধঘণ্টার ফারাকে মনে হয় জ্যাকেট থাকলে ভাল হত। পাহাড়, নদী, সমুদ্র, অরন্যের মতন মরুভূমিরও এক সৌন্দর্য আছে। শুধুমাত্র চোখ নয়, ষষ্ঠেন্দ্রিয় দিয়ে তাকে অনুভব করতে হয়। এক খেজুরের ব্যবসায়ী বশির বলছিল, এ সৌন্দর্য সবার কাছে ধরা দেয় না। এই কাঁটাগা

যেতে যেতে ৪ : 7th July 2018

-------------------- সহপাঠী বলল - স্কুল নাই ডাকতে পারে। তার মানে আমরা যাবনা? মাথা চুলকে বললাম- তাহলে তো স্কুল পালিয়ে যেতে হয়! -ধেড়েখোকার ন্যাকামি দ্যাখ! পালাসনি নাকি কোনোদিন?  আমি তো এসব বিদ্যে তোর থেকেই রপ্ত করেছি। অত:পর পোষাক পরিবর্তন। যাত্রা শুরু। রেলগাড়ির ড্রাইভারের কাছে আবদার করলাম তাঁর কামরায় চড়ে যাব। কিভাবে চালানো হয় দেখব। প্রথমে না না করলেও রাজি হয়ে গেলেন। গন্তব্য গোটা পঞ্চাশ কি.মি. দূরের আরেক মফস্বল। আমাদের স্কুল এক বিজ্ঞান প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছে। তাতে কিসব মডেল বানিয়ে দর্শকমণ্ডলীকে মুগ্ধও করেছে। স্কুলে দেখতে গিয়ে বুঝছিলাম সেটা সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প বা কালিয়া দমন বা জনমেজয়ের সর্পসত্র যজ্ঞ বা হেবার পদ্ধতিতে এমোনিয়া উৎপাদন- সবই হতে পারে। তবে আমার জ্ঞানগম্যির বাইরে। আমাদের তাতে উৎসাহও নেই। বর্ষার দিনে অবৈধ ভ্রমনের নেশায় মাতোয়ারা।  দুজনেই। বিনা টিকিটে যাওয়ার মধ্যেও এক রোমাঞ্চ। কাজেই টিকিটের পয়সা থাকলেই বা কাটি কেন। ড্রাইভার নরনারায়ণ চট্টরাজকে বলিনি সেটা। গন্তব্যে পৌঁছে দেখি বিজ্ঞান মেলা শেষ, দুপুরেই সব স্কুলের ছাত্র চলে গেছে। আমরা? চলেছি যত্রতত্র। দুপুরে ক্ষিদে সময় সারণি মেনে হাজির

যেতে যেতে ৫ :: 22nd July 2018

------------------- দু'পাশে সবুজ বনভূমি আর আগাছার মধ্যে দিয়ে চলে গেছে পিচের রাস্তা। বর্ষাকাল।  তার সঙ্গে কাটাকুটি খেলতে খেলতে যাচ্ছে এক ন্যারো গেজ রেললাইন। লাইন দিয়ে ট্র্বেন চলে না বহুদিন। দু'পাশে সবুজ, কিন্ত চাষ হয়না। মাঝেমধ্যে নিমগাছ আর আগাছা দেখে উত্তরবঙ্গের চা বাগান বলেই ভ্রম হয়। উত্তরবঙ্গীয় জীবন এ অঞ্চলের তুলনায় অনেক মসৃণ। এখানে প্রকৃতি মানুষের কাছে ত্রাস। হয় খরা নয় বন্যা। মাঝে কিছু নেই, কারন মাটির জলধারন ক্ষমতা প্রায় নেই। ছত্তিশগড়। রায়পুর ছাড়িয়ে তেল নেওয়ার পর ড্রাইভার হিমেশ বলল কিছু খেয়ে নিতে। আগামী পেট্রোল পাম্প একশ' কিলোমিটার পেরিয়ে। শুনে আঁতকে উঠলাম। আজও এমন জায়গা আছে! অগত্যা সকালে চা সহ এক পেল্লাই বড়া নিয়ে গ্রাম্য দোকানে বসে গেলাম। শেষ পাতে জিলিপি আর গুলাবজামুন। এই বড়া কায়দা করতে আমার স্বাদগ্রন্থি আর স্বেদগ্রন্থি একজোট হয়ে প্রবল বাধা দিলেও খাবার না পাওয়ার ভয় তাদের নিরস্ত করল। সাময়িকভাবে। একটু পরেই ওরা খাঁটি প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল পাকস্থলীকে সঙ্গে নিয়ে। আরেকবার জেলুসিল এসে আমায় উদ্ধার করে। জীবনে এমন এক প্রেমিকা পেলাম না! লালচে ধূলো-কাঁকরের উত্তেজনা নিবৃত্ত হয়েছে বৃষ্

মনন..26 th Dec 2019

দিগন্তের ঘ্রাণ -------------------- জুঁইয়ের গন্ধ কি শীতের হাওয়ার সঙ্গী? মনে হয় আগেও ঠান্ডা বাতাসে এই গন্ধ পেয়েছি। সে অবশ্য, আগে আমি রামধনু হাতেও ছুটেছি দিগন্ত পেরিয়ে, তুমি ভাবছ সে তো বর্ষাকালের কথা! বর্ষায় তোমার চুলে সন্ধ্যা অবধি বাষ্প ধরা থাকে, সে গন্ধ বেতলার শাল গাছের নতুন পাতার মতন সবুজ। এখন সবাই ভাবছে আমি পরশপাথর খুঁজতে কোয়েলের উজানে যাচ্ছি, আসলে সবুজ রং ভালবাস বলেই আমি সবুজ দিগন্ত জিতে আনতে চাই। বেতলার বনে পিউ কাঁহা পাখির ডাকে আজ ঘুম ভেঙ্গেছে, বারান্দা পেরিয়ে বাগানের ঘাসে দেখলাম অজস্র শিশিরকনা। ভেজা ঘাসের শিশিরের সুবাসে আমার চটি আর পাজামা ভিজিয়ে এগিয়ে চললাম, রাস্তার পাশের ঝোপ থেকে একগোছা সবুজ আর লাল ফুল তুললাম। মেহেন্দি গাছে ঘেরা এক বাগান থেকে মাথা নাড়িয়ে কাঞ্চন আমায় ডাকলো । তারপর? গেলাম গোলাপের কাছে। বুনো গোলাপ, তবু কি সুন্দর গন্ধ ! শহরে গেলেও কি গোলাপে এই গন্ধ থাকবে? এমনিতে আমি ফুল তুলি না, আজ জান - আমি তোমার জন্য তোড়া বাঁধলাম! চিরাচরিত শৃঙ্খলায় নীলচে পাহাড় পেরিয়ে ডুব দিল সূর্য। অন্ধকার নেমে এসেছে, ঠিক তখুনি সেই গন্ধ পেলাম। তোমার না জুঁই ফুলের ভাবছি। তুমি এখানে নেই, তাও উৎস খুঁজ

মনন..10th Feb 2019

নীলের উজানে ----------------------- আজ আমি উজানে চলেছি, সে অতল পথ নাকি তোমারই হাত ধরে চেনা! সাহারার শুকনো বাতাস সকালের নরম রোদে, তোমার গন্ধ এনে দিল। পাশ দিয়ে যাওয়া রেলগাড়ি, তোমারই রং মেখে উজ্বল হতে চায়। কাল রাতে তারা ভরা আকাশের নিচে দাঁড়ালাম, অথবা। ছায়াপথ আমায় ঘুম থেকে ডাকল! দেখলাম একঝাঁক তারা এসেছে আমার দরজায়। ওরা বলে গেল এ পথ নাকি আমাদেরই চিরকাল! আজ তাই আমি আবার উজানে চলেছি, চেনা আবর্তে, চেনা স্পর্শে।  অচেনা উত্তেজনায়। দিনের আলোয় আমি পথ চিনতে পারিনা। রাতের তারারা কি আমায় পথ দেখিয়ে তোমার কাছে নিয়ে যাবে?

মনন...4thMay 2019

দেখি নাই ফিরে *************** জানি আমায় চেয়েছিল এক উষ্ণ সকাল। আমার মন বুঝেছিল এক অলস দুপুর, লজ্জায় মুখ লুকোনো লজ্জাবতী গাছ, আর - কিছুটা হলেও, সুবর্নরেখার জলে ভাসা সাদা ফুল। পাড়ে বসতে বলেছিল একঝাঁক ছোটছোট মাছ। অনেকটা পথ চলতে চলতে আমার গায়ে পথের গন্ধ, পথও কিছুটা আমার গন্ধ শুষে নিয়েছে। তাই- স্থল জল ও আকাশপথ আমার গন্ধ চেনে। প্রতিটি মন ভাঙ্গার মুহূর্তে ঝরেছে কিছু মেহগনির পাতা, আবার- সাহস দিয়েছে নবোদিত আমের মুকুল। বাকি স্বপ্নগুলো দেখতে দিয়ে এলাম এক বর্ষায় ফোটা জারুলকে, স্বপ্নের মৃত্যুর ছাপ রেখে এসেছি হাসপাতালের সবুজ চাদরে। চেনা রুমালের নিরাপত্তা ছেড়ে আমি আবার আমার পথে। এ পাহাড় শুধু আমার কথা জানে, কেন ফিরে দেখিনি রাঙ্গা মাটির পথে।

যেতে যেতে ১১: কালপুরুষের সন্ধানে:: 26th May 2019

********************************** সন্ধেবেলা কায়রোর "রামেসিস" স্টেশন থেকে রাতের ট্রেন কিছুটা যেতেই আবছায়ায় ফুটে ওঠে সাহারা। নীলের পাশ দিয়েই গেছে এই লাইন আসওয়ান শহর অবধি। ফুটে উঠতে থাকে অসংখ্য খেজুর গাছের অবয়ব। সব পেরিয়ে যায়, দুজন বাদে। আমি আর আমার গল্প শোনা, অনুচ্চ টিলার মাথার ওপর, কালপুরুষ। কালপুরুষ তার কর্মে  অবিচল। প্রতি রাতে সে ধনুক নিয়ে মহাকালের সৈনিক। আমি নিশ্চিত সে সাধারণ এক শিকারি নয়।  রাতে ট্রেন থেকে "লাক্সর"-এ নামতেই ঠাণ্ডা শুকনো বাতাস আমায় অভর্থ্যনা জানাল। দূর থেকে ভেসে আসছে ফজরের নামাজের আজান। স্টেশন থেকে বেরিয়েই দেখা যায় "ভ্যালি অফ কিংস"এর ওপর দিয়ে উড়ছে বেলুন।  আমি আবার আরেক মরুভূমির দেশে।  চলেছি কায়রো ছড়িয়ে মিশরের দক্ষিণ দিকে। দক্ষিণ হলেও এদিকটা উত্তরের থেকে উচুঁ। ভুমিরূপ আমাদের উল্টো। সমুদ্রতলের নিরিখে। এখান থেকে সুদান দূর নয়। সেও গল্প নিয়ে শোনানোর অপেক্ষায় আরেক মরুভূমির দেশ। আমার কিন্ত মরুভূমি ভালোই লাগে। মরুভূমির মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় আমি শূন্য দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকি অসীম কোন বিন্দুতে। ভাবি কি করে আর কতদিন ধরে পাহাড়গুলো পাথর হল। তারপর বাল

মনন...30thMay 2019

ফুটপাথ ও পার্কের মাঝে ********************** ফুটপাথে হাঁটতে হাঁটতে মনে হয়, আমি কে? কেন এসেছি এখানে? ফিরে যাব কবে? মাঝে মাঝে মনে হয় আমি ঐ উদাস বেলুনওয়ালা, গ্রাম থেকে শহরে রুটির সন্ধানে আসা এক তরুণ।  যার- ব্যাগে সযত্নে রাখা মায়ের রান্না,  আমিই হয়ত সেই কেরানি যে ফিরতে দেরি হলেও মন দিয়ে দেখে জারুলের ফুল, রাস্তায় কাঁদতে থাকা মেয়েটির হাতের ফুল। যে- ভুল করে মেয়েটিকে ভালবেসেছে, বাসের জানালা দিয়ে বিস্ময়ে তাকানো বালক, অথবা এক বৃদ্ধ সৈনিক, যিনি নত হয়ে ব্যাংকের পেনশনের লাইনে দাঁড়িয়ে। এই পথে নেই কোন বাতানুকূল যন্ত্র, চকচকে কাঠের রাউন্ড টেবিল, মাইনেতে পারিতোষিকের নিরাপত্তা, সম্ভ্রান্ত হোটেলের ফুলদানিতে রাখার অর্কিড, অথবা - প্রেক্ষাগৃহের মোলায়েম আঁধার, হয়ত তারা আমার অপেক্ষাতেও নেই। জীবন আমি খুঁজেছি প্রথম বর্ষার মেঘে, পাড়ার কাঁচা রাস্তায়, সদ্য ফোটা বাতাবি লেবুর ফুলে, কচুপাতা মাথায় ফুটবল খেলায়, মায়ের বোনা সোয়েটারের নক্সায়, আর- অসহায় চোখের ভাষায়, বোনের আঁকা লক্ষীপূজার আল্পনার রঙে, শীতের সন্ধ্যায় জ্বালানো আগুনের নরম উত্তাপে, একদিন- আমার ঘরে প্রেমিকার ছেড়ে যাওয়া চেনা সুগন্ধে। এসব ফিরে পাওয়ার গভীর বাসনা  আ

মনন....1st Jun 2019

মৌন সন্ধান *********** আচ্ছা একদিন আমাকে ভুলেও তো যেতে পারো! যেমন ভুলে গেছো অনেকদিন আগে পড়া কোনো কবিতা! আগে এসব ভয় মুখোশ পরে হাজির হত আমার সামনে, পায়চারি করত ঘন ঘন মনের দালানে। অবসন্ন হত একসময়, যেমন সন্ধ্যায়  পথ হারানো পাখির চিৎকার হারিয়ে যায় পশ্চিম আকাশে। আজ আর এসব ভাবিনা ঘুম থেকে উঠে, হয়ত ভাবার সাহসও পাইনা। দিন বদলের স্বপ্নের চাই আকাশের নীল ঔদ্ধত্য, কোথায় সেই অঙ্গীকার! যা রচিত হতে পারত কোন বৃষ্টিভেজা সন্ধেয়, কেন আমরা সেই অঙ্গীকারে দিইনি এঁটে আমাদের চুম্বনের সীলমোহর? তবে কি সব প্রাণীই পথ হারা, সবাই আশ্রয় খুঁজে পাওয়ার আশায় করে কি সময়ের অপচয়? হিমশীতল জলেও খেলা করে ট্রাউট, যেমন সকালের নরম রোদ খুঁজে পায় তোমার পিয়ানোর রিড। রোদের মুখর স্পর্শেও কিছু ঝংকার থেকে যায় মৌন। তোমার একদা সাইকেল চালানো পথ  আমায় ডাকে। একটি মোড় পেরিয়ে তুমি মিলিয়ে গেছ ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। সে আনাগোনার পথে কিছু ঝরা পাতা খুঁজছে ভেজা চুলের গন্ধ। আসলে আমরা মনে করতে ভুলে যাই।

মনন...12thJune 2019

স্বপ্নমহল ********** পূর্বের থেকে পশ্চিমে চলা নদী মৃদু স্রোতে তার বাজে সন্ধের রাগ বর্ষাকালে আবেগ উপচে পড়ে গ্রীষ্মে রিক্ত অগভীর তার খাত। তারই তীরে এক চার কামরার বাড়ি ছায়ার আদর দিয়েছিল নিমগাছ মাঘের শেষে উঠোনে বিছানো রোদ পেয়ারার ডালে চড়াই পাখির নাচ। ঘরের সামনে পথ ভোলা এক গলি দু'পাশেতে তার সবুজ দূর্বা ঘাস শ্রাবনের জলে নদীর গন্ধে গলি বয়ে নিয়ে যায় ছোট ছোট কিছু মাছ। সাঁঝের আঁধার দীপে আর তুলসীতে শাঁখের ধ্বনিতে প্রবেশাধিকার পায় লম্ফবাতির দোদুল্যমান আলো কালি হয়ে ছাদে তিলকের রূপ নেয়। স্বপ্নমহল আজও রাঙে ফুল-সাজে ভ্রমরের দল বাঁধে বাসা তরু-শাখে কাকে খোঁজে আজ চার কামরার ঘর হারানো নদীর পাশে হওয়া নিমগাছ?

মনন....5th July 2019

ডাউন ট্রেনের জানালায় ................................... এক সন্ধের ডাউন ট্রেনে এসেছিলাম একা। বুকপকেটে পনেরো টাকার টিকিট,  উল্টোদিকের সাদা অংশে আঁকছিলাম ভবিষ্যৎ। এ শহরই সেদিন আমার গন্তব্য, চিরাগের সন্ধানে জানালার পাশে সে আমিই তো আলাদিন। মনে পড়ে শহুরে ফ্লাইওভার?     ছোট শহরের কড়িকাঠের ঘর, অঢেল ভালোবাসা বাজারে পরিচিত হাসি  বর্ণময় সূর্যাস্ত স্টেশনে একঘেয়ে লাইন  চায়ের দোকানের ধোঁয়া       বেলি ফুল আম্র পল্লব গন্ধরাজের বাগান আর কিছু ঝরা মাধবীলতা। ছেড়ে চলে এসেছিলাম তোমার ডাকে। মনে পড়ে হ্যালোজেন বাতি?   সঙ্গে সাদা চাদর, সেদিন। গদির নিরাপত্তা নেই।  বৈঠকখানা বাজারে এসে প্রথম কেনা তোষক, হলুদ ট্যাক্সি করে তাকে স্বপ্নে মুড়িয়ে আনা।  একটি নরম তুলোর বালিশ, বালিশের ওয়াড় সে বালিশে কান পেতেই জলঙ্গীর শব্দ।  মনে পড়ল, আলোয় ঘেরা ময়দান? সেই বিছানা আমায় আশ্রয় দিয়েছে চৌদ্দ বছর সমস্ত ওঠাপড়ায় থেকেছে বিশ্বস্ত। আগের জন্মে সে-ই ছিল আরব্য রজনীর গালিচা। আজ কোন গালিচায় আমার খোঁজে তাকিও না, টুকরোগুলো বরং সেই বিছানার ভাঁজে, মেঝেতেই পেয়ে যাবে। চিনতে পার, মেঘের আদরে বেড়ে ওঠা ফ্ল্যাটবাড়ি? চৌদ্দ বছরের দ্বীপান্তর পেরিয়ে,  আজ আ

মনন...16th July 2019

চল আমরা বলে দিই ............................... আকাশ কালো করে আসা মেঘ। আর এক পশলা বৃষ্টির জলে ভিজল শহর। বৃষ্টির জলে ভেজেনি খুদের দল, বৃষ্টির ছন্দে আমরা বলিনি ছড়া,  কতদিন। তাই বৃষ্টি আর আসেনা ঝেঁপে। শুনি, আনন্দ নগরী আরো বৃষ্টি চায়। জানালার পাশে বসে চল আমরা বলি,আসলে শহর চায় ভালবাসা। নীলচে আলোর সরীসৃপের চলন,  গিলে নেবে নাকি আঁধার!  আসল আঁধার প্রতিটি খাটের নীচে। আঁধার ভালবেসে তারা দেখেনা নাগরিকের দল, কত রাত। আঁধার নিঝুম রাতে- শোনেনি বৃষ্টির শব্দ। শুনি, আরও আলো চাই। সব আঁধারই কি কাটিয়ে দিতে হয়! আজ সারারাত চল গেয়ে গেয়ে ফিরি আঁধারের জয়গান। সোনাপুরের বিল পেরিয়ে আঁধার মুখ লুকিয়ে আছে, দিনাজপুরের আগেই বর্ষা কোথাও গেছে হারিয়ে। ওরা বলে, এ নাকি সময় খরার। রাজপথকে যদি আমরা বলে দিই, সব জলই ধরা আছে তার পথচারীদের চোখে? চিৎকার করে বলি তাদের, শেষবার মন খুলে কাঁদতে? আনন্দ নগরী হয়ে ক্লান্ত আজ কলকাতা! শহরও গোপনে মুখোশ খুলতে চায়। দেখ, আবার আসবে মেঘ, মেয়েটা আবার ভাসাবে নৌকা। কানা গলির জলে, ধুয়ে যাবে শেষ জারুলের ফ্যাকাশে পাপড়ি, এসব দেখতে গিয়ে হঠাৎ যদি দেখ- আমি নেই। ভয় পেওনা! পাবে আমায় সোনাপুরের বিলে। চল আমরা বলে

মনন...28thJuly 2019

যা কিছু বুঝিনা ----------------------- একটু পরেই মুখ দেখাবে চাঁদ, জলভরা একরাশ মেঘের পর্দা সরিয়ে। অথবা , আজ হয়ত মুখই দেখাবে না। এসব আমি বুঝতে পারি না, যেমন বুঝিনা তোমার অভিমান। নির্জন সমুদ্রতটে মাইলের পর মাইল হেঁটে গেছি  তোমার পায়ের চিহ্নের অমোঘ আহ্বানে। তারপর অবাক হয়েছি,  নিজেকে সাহারার বুকে খুঁজে পেয়ে। কোন বালি বুকে জল ধরে রাখে, আর কার জন্য মেঘের জলও শুকিয়ে যায়, এসব আমি বুঝতে পারি না, যেমন বুঝিনা তোমার দীর্ঘশ্বাস। একদিন তালগাছের ছায়ায় শুয়ে, আকাশে চোখ রেখে দেখেছি একদল চিল। গভীর রাতে সমুদ্রের তীরে দেখেছি বসে, মোহনায় আলো জ্বেলে ঘরে ফেরা নৌকার সারি। চিলের দল দেখেনি আমায়, নাবিকের কাছে আমিও আরেক আলোর বিন্দু। কেন চন্দ্রপৃষ্ঠে যন্ত্র খুঁজবে জল আর, আমরা খুঁজব জলে ভরা দীঘি। এসব আমি বুঝতে পারি না, যেমন বুঝিনা তোমায় কোন রঙে বেশি মানায়। তোমার কাঠিন্যে অথবা কোমলতায়, তোমার উষ্ণতা অথবা শীতলতায়, অথবা প্রতিটি স্পর্শে,  তোমায় জেনেছি নতুন করে। হয়ত বা তুমিই আমার পৃথিবী,  আমি একটুকরো মেঘ। মেঘের ঠিকানা কার কাছে লেখা,  পৃথিবীর না অন্তরীক্ষের! আমি জানি না। এসব আমি বুঝতে পারি না।

নাগরিক দিনলিপি ১০ : 30 th Aug 2019

নাগরিক দিনলিপি ১০ ********************* শীতের সকালে সূর্য ঝুঁকতে ঝুঁকতে উত্তরে সরে গেছে। সূর্য এই ক'দিন সকালে এক আধা পাকা-আধা টালির বাড়ির, টালির চালের তলা দিয়ে উঁকি দিতে পারে। এমনকি ক'দিন সেখানে রাখা স্টেটসম্যান কাগজের হেডলাইনও দেখতে পায়।  লোহার জাল ভেদ করে আসা সূর্যরশ্মির সঙ্গে ভাগ করে স্টেটসম্যান কাগজের "ক্যাভিট" কলাম পড়ছেন এক বৃদ্ধ। সূর্যরশ্মি ক্যাম্বিসের ওপর পাতা কাগজে গা এলিয়ে দেওয়ার আগে চঞ্চল করে গেছে কিছু বাতাসে ভাসমান ধূলোবালিকে। পাশে মোটা কাঁচের গ্লাসে রাখা, সদ্য নামানো খেজুরের রস। কোন বাড়িতে মোরগ ডাকছে, মাঝে মাঝেই কিছু ফেরিওয়ালা গলিতে এসে হাঁক দিয়ে চলে যাচ্ছে। ওদিকে শীতের সকালেই সদ্য কেনা বেআব্রু একটি পুতুলের চুল আঁচড়ে দিচ্ছে একটি বাচ্চা মেয়ে। সেই মেয়ে ও তার পুতুল, দুজনের পোষাকই মায়ের উলে বোনা। তার বালক দাদা লুচির থালা কোলে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে চলেছে বৃদ্ধকে। ইতিমধ্যে জানা গেছে পিতৃকূলের সবার জন্য এই বৃদ্ধ যা করেছেন তা শোধ করা যায় না। কয়েক দশক পরিবারের সমস্ত ভাই বোনের খরচ বহন করেও বাবা মাকে বাড়ি বানিয়ে দিয়েছেন। একবার বৈভবের জীবন ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়ে আবার পরি

মনন..3rd Sep 2019

পথের দিবাস্বপ্ন ************** অনেকটা পথ পেরিয়ে এসে মনে হল অনেক কিছু বলা হয়নি, ছেলেবেলায় প্রথম উল্কা দেখার গল্প অথবা কাদামাঠে গোল্লাছুট খেলার, তোমার ডটপেনও রয়ে গেল বুকপকেটে। আমাদের তো আর দেখা হওয়ারও কথা নেই। দূষণে ঢাকা রাজপথ সকালে ধুয়েছিল এক পশলা বৃষ্টি, নেমে আসা জলভরা কালচে সাদা মেঘ টুকরো টুকরো হয়ে সারা আকাশে খেলা করছে, বিস্তৃত জলাশয় ধরছে তাদের জলছবি। যদিও ওদের এখানে ধরা দেওয়ার ইচ্ছা নেই। সেতুর ওপর চলমান জনস্রোত থেকে এক পা সরে ধরি রেলিং, ভাবি এক শান্ত নদীর কথা, তার জল জলজ উদ্ভিদের রংয়ে নিজেকে রাঙ্গিয়ে রাখে, এক নদীর জল আমায় দু'ভাগ করে মাঝখান দিয়ে বয়ে যায়।  সে নদীর আজ এখানে আসার কথা নেই। শহরে পাটকল মালিকের প্রাসাদোপম বাড়ি ও বাগানের সামনে দাঁড়াই, ট্রেনে যেতে দেখি বন্ধ পাটকলের লাল দেওয়াল গঙ্গা পেরোতে পাটকলের ঔপনিবেশিক বাংলো, ফেরিঘাটে বন্ধ কলের বৃদ্ধ শ্রমিক ভিক্ষা চায়। এত মিছিল পেরিয়ে ওদের তো ভিক্ষা করার কথা ছিলনা! ©দেবাঞ্জন বাগচী।

মনন...23rd Oct 2019

সবুজ নদীর জলে --------------------------- জানতে পারেনি মনোযোগী পথচারী  সযত্নে আমি এড়িয়েছি ধ্রুবতারা। পথ চেনানো নিয়ন আলোর রেশ, বিটুমিন ঢালা শহরের রাজপথ, ধাঁধানো আলোয় দেখেনি তুলে চোখ, উপসংহারে উল্কার উল্লাস। শেষ বিকেলে লালচে সূর্য যখন, কুয়াশায় মুখ পারেনি ফেলতে ঢেকে, উনুনের ধোঁয়া ফসলের ঘ্রাণ নিতে, নেমে এসেছিল হলুদ সর্ষে ক্ষেতে। শাঁখের শব্দে ফিরে এসে শুকতারা, শুনিয়েছিল গতজন্মের কথা। ওদের আমি আগেই দিয়েছি বলে- নিয়ে যাবে কবে, সর্পিল সেই পথে? নিজের থেকে কয়েক জন্ম দূরে আলাপ আজকে পাহাড়ি ফুলের সাথে। ধাপে ধাপে নামা সবুজ ধানের ক্ষেত, মন্ত্রনিশানে হিমেল হাওয়ার দাগ। পাহাড় ভাঙে সবুজ জলের নদী, শৈলশিরায় আবার হারিয়ে যায়- পাহাড়ের পথে নিজেকে হারিয়ে মন, তোমার গন্ধে জীবনের খোঁজ পায়। - দেবাঞ্জন বাগচী ।  (রোলেপ, সিকিম)

মনন...25th Oct 2019

উষ্ণ নিঃশ্বাসের মুখোমুখি ------------------------------------ সকালের নরম রোদ ভূমি স্পর্শ করার আগেই শুনতে পাই তোমার হৃদস্পন্দন। আমার হৃদস্পন্দনে মিলিয়ে নিই, তোমার ব্যস্ত জীবনের লয়। তোমার গন্ধের আবেশে আনমনা হয়ে ঝরে যায়, দূর্বা ঘাসের ওষ্ঠলগ্না, কিছু শিশিরবিন্দু। তাদের আমি ধরে রাখতে শিখিনি। ব্যস্ত দিনের রোজনামচা পেরিয়ে যেদিন  তুমি তাকাও নিজের দিকে, তারা আবার বাসা বাঁধে ঘাসের বুকে। একেক দিন আমার বুকে তোমার রেখে যাওয়া উষ্ণ নিঃশ্বাস সলজ্জে জানতে চায়,  সে কি করে আমার বুকে এল! তাকে বুকে আঁকড়ে রেখে দেখাই- কিভাবে পাথরের বুকে নিরাপত্তা পায়, একখন্ড নীলচে সরোবর। তোমার স্বেদবিন্দু আমি জমিয়ে রাখতে পারিনি। এ সরোবর একদিন দেখেছে তোমায়। অনেক দিনের কথা।  মনে পড়ে, সেদিন তুমি এখানেই দাঁড়িয়ে ছিলে? মনে রেখেছে পাথর ভেদ করে উঠে আসা কিছু শুকনো রডোডেন্ড্রন, কুয়াশা ঘেরা আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ, আর কিছু স্কারলেট মিনিভেট। আমার ব্যস্ত ভ্রমণের ফাঁকে ওরা ডাকে, খালি তোমারই গল্প বলতে চায় কিচিরমিচির করে। আমারই হাতে সময় নিয়ে আসা হয়নি। পাহাড়ি ফুলের পাপড়িতে লেগে থাকে কিছু ঝরে যাওয়া রেণু, মনে পড়ে ঝরে যাওয়া শিউলি ফুলের মুখ। তোমার অ

মনন...27 th Oct 2019

নিশিযাপনের পর --------------------------  নিশিযাপনের পর তোমার চুলে আমি ভোরের গন্ধ পাই। ঘুমভাঙা চোখের পলকে , কুঞ্চিত কপালের ভাঁজে, সলজ্জ হাসির সমুদ্রে কুড়িয়ে নিই  প্রিয় স্বপ্নের অনুচ্চারিত বর্ণনা। যেভাবে তুমি ঝিনুক কুড়িয়ে আন। ঊষার অস্ফুট আলোয়, তোমার শিশিরে সিক্ত চুম্বনে, আমি পথ চলার দিশা খুঁজে পাই। যেভাবে নাবিক উত্তর মিলিয়ে নেয়। নিশিযাপনের পর ভাবি পৃথিবী কতটা পথ পেরোল কক্ষপথে, শেষ রাত্রির নিস্তব্ধতা আমাদের কতটা আলাদা করল, কুয়াশা আসে না কেন জানালার কাঁচে, যখন তুমি আমায় ঘিরে থাক। নরম আবেগে ভেসে ভেসে যেতে ভাবি, ঘুম কেন আমাদের আলাদা করে দেয়! নিশিযাপনের পর মনে হয় শেষ রাতে একই স্বপ্ন আমরা নিয়েছি দু'ভাগ করে। পাহাড়ের ওদিকে আমি, এদিকে তুমি, আমরা পর্বতাহরণে মগ্ন, সন্ধে নামার আগেই পাহাড়চূড়া হবে আশ্রয়। ওপর থেকে দেখব সেই জলাধার, আমাদের অবগাহনের একমাত্র সাক্ষী। সন্ধের পর আঁধার নামার আগে, আমায় লুকিয়ে নিও তোমার বন্ধনে। দীর্ঘ হোক পাইন গাছের ছায়া, ফিরে যেতে দাও পাখিদের গাছের ডালে, বয়ে চলুক দখিনা বাতাস, আমার দৃষ্টি ডুবে যাক তোমার অপলক চোখে, আমার বুকে সারারাত শোন কান পেতে, কত পাহাড় পেরিয়ে আমি এলাম তোমা

মনন...2nd Nov 2019

মলিন সময়ে লুকোচুরি -------------------------------- চেনা রেলপথে চেনা স্টেশনে পরিচিত দৃশ্যের কোলাজেও লেগে থাকে কর্মজীবনের দিনপঞ্জি। রাতের খালি কামরায় মৃদু দুলুনিতে নেমে আসা অগভীর ঘুম, গাঢ় হওয়ার আগেই কানে বেজে ওঠে- স্বপ্নভঙ্গের কর্কশ শব্দ। একেকদিন আমি সিগারেটের শেষ অংশের মতন ফুরিয়ে যাই। অচেনা শহরের পথে, যখন  আকাশভেঙে বৃষ্টি নামে- শতবর্ষ পুরোন বাড়ির গাড়িবারান্দায় আশ্রয় নিই। বহুদিন চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির জল পান করিনি। তারপর এক বর্ষার দিনে, বৃষ্টির স্বাদ নিতে  উঠি আমার বাড়ির ছাদে। সেদিন, অনেক প্রতীক্ষার পরেও বৃষ্টি নামে না। একেকদিন আমি তৃষ্ণার্ত থাকি, খালি ক্যানের মতন। বর্ষাবিদায়ের পর  সকালের নীল আকাশের দিকে চেয়ে, যখন হারানো মানুষের কথা ভাবি- আমার এক তারা-ভরা আকাশের কথা মনে পড়ে। অসংখ্য তারার ভিড়ে আমি, সূর্যকেই হারিয়ে ফেলি! অবিন্যস্ত মন ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় ছায়াপথ জুড়ে, একেকদিন রাতে আমি একমুঠো কাঠের গুঁড়োর মতন পড়ে রই। অমোঘ আপসের, হোঁচট খাওয়া পথে  প্রতিনিয়ত আমার গতিরোধ করে - দেওয়াললিখন মানুষের মিছিল পথশিশুদের লুকোচুরি খেলা খসে পড়া পাখির পালক, আর  মলিন সময়ের অমলিন চাঁদ। মনে হয় পতনের শেষ মুহূর্তে,  উ

মনন...2nd Dec 2019

বেলাশেষে ********** ধোঁয়াশা পেরিয়ে নীল আকাশের চিল, পেল বিশ্রাম ভাঙাচোরা জানালায়। ছাতিম ফুলের মাতানো গন্ধ মেখে ফুটপাথ শুধু রেখে দিল কিছু স্মৃতি। সকালের ফুল জানে কি সে উপচার,   অথবা শুধুই পুতুল পুতুল খেলা? কেন অধিকার লাল গোলাপের প্রেমে রজনীগন্ধা কেন সম্ভ্রম পায়? দেখে পথচারী মৃত বিড়ালের ছানা, ভাবছে এ কেন পায়নি গো ন'টা প্রাণ! সে শোক রাতের পথেই মিলিয়ে যাবে, শোকের ঠিকানা মহানগরের নালা। চোদ্দ প্রদীপ নিভেছে সপ্ত প্রহরে, ঢাকা এ শহর মৃত ফানুসের লাশে। শেষ লোকালকে যেতে দিল লাল বাতি, কালকের পিছু নিল আজকের দিন।

মনন...22nd Dec 2019

বিলবোর্ডের মুখোমুখি ******************** খোলা জানালার ওপারে শহরের বুক ফুঁড়ে ওঠে বাহারি বিলবোর্ড। এক পা রাখে বস্তির উঠোনে,  আরেক পা মজা খালের পাঁকে, কয়েক বছরে সে নিজের গায়ে এঁকে নিয়েছিল অজস্র ছবির পোষাক। দিয়েছিল সৌন্দর্যের হদিশ, বাসার সন্ধান  অথবা ভ্রমনের তথ্য। পেছনে তার অজস্র জ্যামিতিক মাপের অটুট লোহার কাঠামো। রঙ্গীন বিলবোর্ডে বসা যে কাকটি রোজ আমায় দেখে, তাকে কেউ পাখি বলে না। জানিনা রৌদ্রের যে রঙ আজ দেখেছি,  কালও পাব কিনা। যত পাখির ডাক শুনলাম, তাদের সুর মনে থাকবে কিনা, পাব কিনা আর দেখতে- জলঙ্গীর পাড়ে শিশিরে ভেজা জংলা ঘাসের বন। অথবা হয়ত সেখানে তখন, শ্রাবনের অঝোর ধারা। খুঁজেছি শিশির বিন্দু নিয়মমাফিক দেখা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি, এখনও আসেনি সম্মতি। যেমন আসেনা কবিতা রোজ।  রাতের স্বপ্নভঙ্গের প্রহরে ডাকে  মায়াকুলের ধানের ক্ষেত, বীমার কিস্তি দিতে দিতে পিছু ডাকে  ব্যবসায়ী খেলার বোর্ড। বিলবোর্ডে প্রগলভ নারীর মুখ মনে করিয়ে দেয় তোমার সলজ্জ হাসি, যা আমায় চিরকাল মুগ্ধ করে। ছেলেবেলা থেকে এখনও যেভাবে ঢেউ ভাঙ্গার শব্দে মন্ত্রমুগ্ধ হই। সাগরে জোয়ারের আদরে আর চাঁদের মৃদু আলোয়, আবেগে কাঁপতে থাকে একলা নৌকা, মাঝ

মনন...25 th Dec 2019

কানাগলি ও আমি ***************** ফিরতে দেরি হওয়ার দিনে আমি শুনি, কানাগলির না বলা গল্প। অঝোরে বৃষ্টির সন্ধ্যায়, জলজমা গলিতে মাটির নীচ থেকে ভেসে ওঠা অনেক না শোনা কথা। কুশীলবেরা স্মৃতি রেখে বিদায় নিয়েছে, বহু বছর আগে। যেমন আতরের শিশিতে রয়ে যায় গন্ধ বহুকাল। অনেকাংশে অসম্পূর্ণ।  তেমন চেনাও নয়- এ শহর, স্ট্রিটল্যাম্প, ভাঙ্গা পথ, অথবা উঁচুনিচু ফুটপাথ। তারই মধ্যে মায়াবী লাগে কানা গলির মলিন গল্পগুলো। বৈশাখের দুপুরে শহরবাসীকে যখন ঘন কালো মেঘ- দেখাতে আসে ভয়, চঞ্চল পাখির ডাকে মনে পড়ে এক আমগাছের কথা। আজকাল চুপ করেই থাকি। গল্পে মুখর ছুটির আড্ডায়, নির্মেদ উপন্যাসের শেষ লাইনে, অথবা আমাদের অসমাপ্ত প্রেমের বিকেলে। নিজের কাছে তৈরি হয়না নতুন কোন অঙ্গীকার, যখন ভিখারি নাগরিক সাহায্যপ্রার্থনায় আসে। পার্কের পথে পদব্রজে স্মৃতির সঙ্গী হয়ে ফিরে যাই, কয়েক দশক আগে। যেমন পেছনে ছুটে যায় বাড়িঘর, ট্রেনের জানালা দিয়ে। অনেক পথ পেরিয়েও এগোতে পারিনা, নিয়তি সৃষ্ট অদ্ভুত সব ধাঁধার ছকে আমরা সবাই বড় অসহায়। মনে হয় যুগ যুগ ভিজে আজ এ শহরও সম্পৃক্ত, আর জল নয়। ঘনিয়ে আসা মেঘকেই আজ সে কানা গলির গল্প শোনাতে চায়। দেবাঞ্জন বাগচী।

মনন....30th Dec 2019

প্রহেলিকা ********** কুয়াশা পেরিয়ে,  আলোয়ান জড়িয়ে, বারবার নিজেকে দেখতে আসি। এক আমি আমাকে চিনতে পারে, আরেকজনের চেনা চেনা লাগে। বদলানো সময়ে একজন বেঁচে আছে  যেভাবে শামুক,নিজেকে সামলে নেয় বিপদে। আরেকজন, বন্ধ চটকলে বা চা বাগানের গেটে। অথবা, মায়ের উলবোনা দেখছে কমলালেবু হাতে। কিছু ছেলেবেলার সোয়েটারে, এখনও কমলালেবুর গন্ধ। কোনভাবেই উলের বলগুলো আর খুঁজে পায়না বিড়ালছানা, উলের গন্ধ পেতে হলে আজকাল যেতে হয় কারখানায়। সেখানে মাংসের পোড়া গন্ধ মেখে তারা নরম সোয়েটার হয়। সমস্ত প্রহেলিকা ফুঁড়ে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে আসবে তুমি, এমন আশায় দীর্ঘ হয় মেঘলা দিন, এমন কত অঘটন আমাদের ঘটেছেও হামেশাই। তবুও, আজকাল খালি নিজের সঙ্গেই প্রতি বাঁকে দেখা হয়ে যায়। ধ্বংসের উৎসবে মগ্ন সময়ে, এত বাঁকে,  আসলে পথই নিজেকে হারিয়েছে।   তাই বারবার বলি - আমি হারাই নি, বিশ্বাস না হলে শোন  কি বলে, পরিযায়ী পাখিদের অভ্রান্ত উড়ান কি বলে, নদীর ভাঙ্গনে পরিত্যক্ত পিচের রাস্তা কি বলে, আমাদের বহু মিলনের সাক্ষী ধ্রুবতারা। আলোয়ানের ফাঁকে ক্রূর হাসি হেসে নিজের দিকে আরেকটা আমি আবার চলে যায়। ফিরে সে আসবে আবার। নিজের সঙ্গে নিজের বসার কথা ছিল  সময়ের ইতিহা

মনন....4thJan 2020

হ্যাঁ, আমার হাত কাঁপে ******************** ছাইরঙা আকাশ অকাল সন্ধের কালো রঙ ধারণ করার আগেই,  তাকে ঘোলাটে লালচে হলুদে সাজায় অগুনতি হ্যালোজেন। এমন মেঘলা দিনে ডুবে যাওয়ার আগে  আকাশের সূর্য মনে করিয়ে দেয়নি, তার রঙ আসলে লাল। মাটিতে মাথায় প্লাস্টিক বেঁধে ফুটবলে মত্ত খুদেরা থামেনি কাদামাঠে। গলির এপাশের আঁধারে টিমটিমে আলোর বৃত্তের শাসনে জুয়ার টেবিল। তার পাশে দাঁড়ানোর আগে,  আবার লোকটা ভেবেছিল, আগামী কাল থেকে আর নয়। ওপাশে আবার সেজে দাঁড়ানি মেয়েটা ভেবেছিল, এই তো আর মাত্র কয়েকটা দিন। গগনচুম্বী বসতবাড়ির উঁচু তলায়, টেবিলে রাখা অর্ধেক জলের বোতলের কাছে,  আসার অপেক্ষায় ছিল কিছু ঘুমের বড়ি । হাতে নিয়ে কেউ দেখেছিল ফুটপাথে রাতের বিছানা করছে এক সংসার। দেখতে পাওনি ! কি করেই বা পাবে। এমন মেঘলা দিনে তোমার অবিশ্বাসী মন, তখন যেন ধ্বস্ত মহেঞ্জোদারো নগরী। চোখ থেকে ঝরে গেছে জারুলের বৈভব, অবিন্যস্ত হয়ে পড়ে আছে জর্জেট শাড়ি। ঘরের কোণে। মুখে তাও রয়ে গেছে প্লাস্টিকের হাসি। বিশের দশকেও নিয়ম করে পরা হাতঘড়ির মতন। সময়ের হিসাব শরৎ আর বসন্তই বা কি করে জানে, হাতঘড়ি বা মোবাইল না দেখেও! সময় পেরিয়ে ভাল সময়ের অপেক্ষায় প্রহর গোনে চর

মনন...10th Jan 2020

কয়েকটি মধ্যরাত ***************** গত বছরের ক্যালেন্ডারের পাতায় লেগেছে,  বিশ্বজুড়ে অনেক দাবানলের পোড়া দাগ। কেরলের তীব্র বন্যায় ভেসেছে অনেক প্রাণ, ঘূর্ণিঝড় আবার বলে গেছে সে অদম্য। আমাদের মানচিত্র জ্বলেছে আগুনের রঙে। গেরুয়া, সবুজ, লাল, সাদা, নীলের আগুনে পুড়েছি আমরাও। মধ্যরাত্রের স্বপ্নে কিছু মানুষকে আহ্বান করেছে এক বিবর। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটনির পর ঘুম ভেঙ্গে প্রবাসী, বাকি রাত ফিরতে চেয়েছে নিজের চেনা বৃত্তে। অনেক মধ্যরাতে বৃষ্টি ঝরার তান রেখে যায়নি তোমার প্রেমের স্মৃতি, আমার বালিশের নীচে। অথচ তুমি এসেছিলে গ্রীষ্মের দাবানলের মতন দগ্ধ করতে আমার সমস্ত পাপ, বন্যা সেজে ধুয়ে ফেলতে সে সমস্ত ছাই, দমকা হাওয়ার টানে নিয়ে যেতে কাশফুলে ঢাকা সেই ঝিলের পাড়ে, মনের সমস্ত রঙ মিলিয়ে দিতে পলাশের কুঁড়ির অগ্নিশিখায়। তোমায় পাওয়ার অপেক্ষায় আবার সাজবে বসন্তের পলাশে লালমাটি, ঝোরা আর ডুংরির দেশ। শুধু আমার কিছু মধ্যরাত তোমায় রোজ খুঁজে পায়না। দেবাঞ্জন বাগচী।

মনন...16 th Jan 2020

নদীর নামটি নদী ***************** কথা ছিল এক নদী দেখতে যাব আমি আর তুমি। প্রথম আশ্বিনের গুমোট গোধূলিবেলায়, তার কালো হয়ে আসা জলের ওপর উড়ে যাবে বেলাশেষে একঝাঁক পানকৌড়ি। সদ্য ফোটা কাশের বনে আলো আঁধারিতে বেঁধে নৌকা,  ফিরবে ঘরে মাঝি। নৌকা মানাবে কাশবনেরই ধারে ঠিক জেনে যাব আমি আর সেই মাঝি, জানবে না শুধু তুমি আরেকটি বার, কোন কুঠুরিতে আমাকে রাখতে হয়। আকাশের মেঘ তোমার সমস্ত আবেগে রাঙা হয়ে,  সূর্য ডোবার আগে নদীর জলে দেখবে নিজের মুখ।  কলাগাছের সবুজ বাগান পেরিয়ে ফিরবে ঘরে গরু মহিষের দল। ফেরার পথে খুঁজবে বাঁশির সুর, শুনেছি আমিও রাখাল বাঁশি বাজায় কোথায়? জান না তুমিও! তবে হয়ত দিকশূন্যপুর। কিংবা হয়ত বাজাতে জানত। সে অনেক জন্ম আগে, নদীর নাম তখনও হয়নি নদী, মাঝিরা তখনও বানাতে শিখছে নৌকা, তোমার নেলপলিশের সঠিক শেডের খোঁজে পানকৌড়িরা ম্যাপল পাতার দেশে। নামও তাদের অন্য কিছু ছিল,  হয়ত রূপেও। নাম আর রূপ বদলে যেভাবে আমরা এসেছি বারবার। কেউ কি জেনেছি আবার ডাকবে কাশে ঢাকা জমি আর শেষের বেলা, অথবা, নাম বদলে নিজেদেরই বারবার। আমাদেরই গল্প বলবে কীটপতঙ্গ আর পাখির দল কয়েক প্রজন্ম ধরে। তোমার রান্না পায়েস রইবে আমার দিকে চেয়ে,

নাগরিক দিনলিপি ১১ : 26th Jan 2020

শীতের সকালে পাশের বাড়ির গাছপালার ফাঁক দিয়ে রোদ হাল্কা কুয়াশা পেরিয়ে আমাদের বাড়ির বাগানে হাজির নরম রোদ্দুর। মন দিয়ে দেখছি হাওয়ায় পাতা নড়ছে আর রোদের আল্পনাগুলো পাল্টে যাচ্ছে ক্যালাইডোস্কোপের মতন। আমার গায়ে সোয়েটার, কান ঢাকা। চমকে উঠলাম পরপর বন্দুকের আওয়াজ শুনে। বাবা অভয় দিলেন - কুচকাওয়াজ শুরু হল। ছাব্বিশ জানুয়ারির প্রথম স্মৃতি অনেকটা এমনই। একটু বড় হয়ে যখন প্রথম নিজে দেখতে গেলাম তখন দেখলাম সে এক বিশাল আয়োজন। স্টেডিয়ামে তিল ধারণের জায়গা নেই। সাধারণ মানুষের সাথে হাজির জেলাশাসক, আরক্ষা অধীকারক, বিধায়ক আর সব স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। আরক্ষা বাহিনী, রেডক্রস, স্কাউট, মনিমালার দল কুচকাওয়াজ করতে করতে চলে  যাওয়ার পর এক এক করে স্কুলের কুচকাওয়াজ। শৃঙ্খলিত ড্রামের তালে সবাই স্টেডিয়াম প্রদক্ষিন করার পর নানা রকম খেলা দেখানো শুরু হল। মাইকে বাজতে থাকল কদম কদম বাড়ায়ে যা, উর্ধ গগনে বাজে মাদল। প্রথম পুরষ্কার পেত গভর্মেন্ট স্কুলের মেয়েরা অনুষ্ঠান শেষে স্টেডিয়ামের সামনে রীতিমত ট্রাফিক জ্যাম। এ যে সময়ের কথা সেই সময়ে মফস্বল শহরে ট্রাফিকই ছিল না। তাই এক বাচ্চার কাছে সেও এক দেখবার বিষয়।  কিছুদিন পর যখন ফুলপ্যান্ট পর

মনন...29thJan 2020

সহজে বিরাম নেই ****************** একেকদিন সকালে সূর্য খুলে রাখে লালচে মুখোশ, ভাল লাগে না তার, ভাঙাতে সবার ঘুম। ঘন মেঘের ওপারে, চাদর জড়িয়ে, সে আবার খোঁজে অসম্পূর্ণ স্বপ্নের রেশ। আমি ভাবি  কোথায় মেঘের শুরু, কুয়াশার কোথায় শেষ। অনেক আলো দিয়ে সূর্য, সেদিন বিশ্রাম নেয় । রাজপথে সাজানো শতায়ু বাড়িঘর সেদিন ভেজেনা বৃষ্টির জলে। সে তাদের স্নানের উৎসব। বৃষ্টির জলে আরো কিছুটা ধুয়ে যায়  গাড়িবারান্দা, খড়খড়ির জানালা, লাল মেঝে,  মরচে ধরা লোহার গেটে রয়ে যাওয়া আভিজাত্য। বেলজিয়ান গ্লাসে আটকে থাকা ধুলো ফুটপাথ বেয়ে, খুঁজে পায় আবার রাজপথ। মাঝে মাঝে পথও বিশ্রাম নেয়। কোলাহলে মুখর নগরের পথে মিছিল অপরাহ্নে শান্ত হয়ে আসে, নাগরিকের চোখ খোঁজে চেনা নম্বর, বাসের গায়ে।  বাসের ধোঁয়ায় অচেনা যাত্রীর চেনা মৃতদেহের গন্ধ, তবুও কেউ কেউ তাড়া দেয়, "জোরে চালাও"। সবুজ সিগনালে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখে বাস, অনেক দশক চলার পর, সে পঙ্খিরাজ হয়ে বিশ্রাম চায়। দু'দিন, দু'রাত বৃষ্টির পর  মত্ত বাণের জল  চারদিক ভাসিয়ে ,আবার ছাড়ে নদীর সঙ্গ। তার কিছুটা বিশ্রাম পায় দীঘির জলে কিছুটা চোখেই রয়ে যায়। অবিরাম দেখার পর চোখ  একেকদিন, আবার ত

যেতে যেতে : ১২..16thFeb 2020

যেতে যেতে : ১২ **************** এই শিরোনামে কিছু লিখে বন্ধুদের প্রায় ন'মাস জ্বালানো হয়নি, নিজগুনে বন্ধুরা বাকি একশ' সাতটি দোষ ক্ষমা করেছেন। আমার প্রলাপও সহ্য করবেন মনে করেই সাহসটা জুটিয়ে ফেললাম। আমি এখানে বেড়ানোর সময়ে ঘটে যাওয়া কিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিই। হিমালয় বা পিরামিড বা পাহাড়ি ঝর্ণা কয়েক হাজার বছর ধরেই সুন্দর, তাই নতুন করে বলার মত শব্দ আমার অভিধানে নেই। বলার যেটুকু আছে তা হল আমার কথা। আজ আবার আলাপ করাই আমার এক এমন বন্ধুর সঙ্গে, যার সঙ্গে আলাপ আমার বিরলতম সৌভাগ্য বলেই আমি মনে করি। আমার মিশর ভ্রমণ ছিল বেশ অদ্ভুত। ইন্টারনেটে পরিচিয় হয় বন্ধু তারেক আর স্রোতস্বিনীর সঙ্গে। প্রথমজন জার্মান। তার বাবা মিশরীয় কমিউনিস্ট মুসলিম ও মা জার্মান, কর্মসূত্রে তারেক জার্মান রাষ্ট্রদূত হিসেবে আবার মিশরে এসেছে কিছুদিনের জন্য। সে এলেমদার লোক, ল্যাটিন আমেরিকা ঘুরেছে খালি পকেটে। কোন খাবারেই তার আমারই মতন অরুচি নেই। তার গিন্নিও কম না, সে বেটির বায়ো ডেটা আফগানিস্তান যুদ্ধে তালিবানের মর্টার থেকে পালানোর অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ। স্রোতস্বিনীর বাবা দক্ষিণ ভারতীয়, মা বাংলাদেশে জন্মেছিলেন। ওদের সন্তা

নাগরিক দিনলিপি ১২ : চেনা সুখ, চেনা দুঃখ ..25th Feb 2020

***************************************** রবিবারের সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে, আধ ঘন্টার দূরত্বে আমার জন্য অপেক্ষা করত দু'টি বিরাট দীঘি। শহর কলকাতার বুকে সে এক কল্পলোক। এপারে ঘাসে ঢাকা মাঠ। তাতে নানা ঋতুতে হতে দেখেছি চোরকাঁটা, কাশ, বুনো কুল, ঢোল কলমি বা কাল কাসুন্দির ঝোপ। মাঝে কচুরিপানায় খেলা করে কিছু জলমুরগি, পানকৌড়ি, বালিহাঁস আর বক। ওপারে কলাগাছ, কৃষ্ণচূড়া, খেজুর আর আগাছায় ঘেরা এক স্বপ্নের জগৎ। আরো দূরে মাথা তুলেছে অনেক নিউ টাউনের হাই রাইজ বাড়িঘর। দুই পুকুরকে আলাদা করে রেখেছিল এক পায়ে চলা পথ। সে পথ বর্ষার কিছুদিন বিশ্রাম নেয়, তখন দুই পুকুরের মিলনের সময়। ওপারের জনপদ থেকে মাথায় ঘোমটা দিয়ে নিউ টাউনে কাজে আসতেন বাড়ির মেয়েরা। ছেলেদের কেউ দাঁতে মাজন নিয়ে গবাদি পশু স্নান করাত, কেউ সব্জি বিক্রি করতে যেত। শহরের সীমানার মধ্যে জায়গাটি এতই গোপন ছিল, এপারে এক উৎসবের দিনে, আনন্দে আত্মহারা হয়ে, গানের সঙ্গে নাচতে নাচতে, তিন কিশোর আনন্দে বিবস্ত্র হয়ে জলে ঝাঁপ দিল। তারা বয়ঃসন্ধিতে, এতটা বাড়াবাড়ির জন্য প্রথমে প্রস্তুত ছিলাম না। পরে রাগ ছিল না। ভেবে দেখেছি অমন সুন্দর জায়গায় নির্জনতার মাহাত্ম্যে ওরা সেদি

মনন...5thMarch 2020

জীবন্মৃতের বিবৃতি ***************** ভাইরাসের ভয় জানাল জীবন্মৃত শহরকে, নাগরিকেরা আজও বেঁচে সভয়ে। আর সামান্য বাঁচার ইচ্ছা, আবার মুকুল ঝরে আমের গুটি দেখতে পাওয়া, মনে পড়া, ঈশান কোনে বর্ষার মেঘ। এভাবেই ভয় থেকে জীবনের জন্ম, বাঁচতে চাওয়ার ইচ্ছারা সাড়া পায় শরীরের, হয়ত বা, তারাই নির্মাণ করে শরীর। পশ্চিমে এগিয়ে যাওয়ার পথে  মেঘলা সকালে, থমকে দম নিল সকালের সূর্য, বেলুনওয়ালা শিশু, হলদে ট্যাক্সি ও  ট্রামের শব্দ। তখন ভেজা চুলে তুমি শুয়ে ছিলে আমার পিঠে, তোমার আঙুলের গ্রাসে আমার চুল, তোমার মুখের আদল ফুটে উঠেছে আমার নোনা দেওয়ালে, নোনার কবলে আমারও স্বপ্নগুলো। তবুও, অনন্ত গল্পের নেশায় মেতেছি আমরা। যে সংলাপের দৈর্ঘ্য, কবেই অতিক্রম করেছে রাজপথ। অথচ, কয়েক শতকের চলাচলে ক্লান্ত তিলোত্তমা, কখনও এক কন্যা শিশুও ছিল। বানিয়েছিল মাটির পুতুলের মত বাড়িঘর, সাজিয়েছিল অসংখ্য বাজারের পশরা, পাহাড়ি পথের স্মৃতি উস্কে দিত তার বুকে  ঝাউ গাছের সারি। হাত পা ছুঁড়ে বুড়ো হওয়ার ব্যস্ততার মাঝে শহুরে ঝাউয়ের দল সারা গায়ে ধুলো মেখে, ছিল আজ স্নানের প্রতীক্ষায়। সকালে ঝাউপাতাও তার পিঠে বৃষ্টির জল নিয়ে ফুটিয়েছিল এক টুকরো হাসি। সে হাসিই আজ হ

নাগরিক দিনলিপি ১৩ : ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ...21st March 2020

*************************************** "মোক্ষম আঘাত যারা করেছিল তারা হয়ত জানে না, মোক্ষমের প্রয়োজন নেই, শুধু আঘাতই যথেষ্ট, যথেষ্ট আঘাত।" সুযোগ পেলেই তারাপদবাবু কোথায় কোথায় চলে যান, ওঁর লেখার মধ্যে আমাকেও বগলদাবা করে নিয়ে। উনি আজই আবার এক কবিতায় এই আঘাতের কথাই তুললেন। সারা বিশ্বকে নাচিয়ে বেড়াচ্ছে করোনা ভাইরাস। আমরা এক অসম যুদ্ধে লড়ছি। এখানে সব যুদ্ধাস্ত্র বিফল, ধর্ম হার মেনেছে, উগ্রপন্থীরা বেকুব, গ্লোবালাইজেশনের মোটামুটি লাইগেশন হয়ে গেছে, অস্ত্র বেচা দেশগুলোও ঘর সামলাতে ব্যস্ত। উপায় একটাই - অন্তরীন হয়ে বসে থাকা, আর আকাশ পাতাল ভাবা। আপাতদৃষ্টিতে শাটডাউন দরকার বলে মনে হচ্ছে, কিন্ত আমরা কি সেটা হজম করতে পারব? পাকিস্তানে গতকাল এক কোয়ারান্টাইন কেন্দ্র পুড়িয়ে দিল এলাকার উন্মত্ত জনতা, অবশ্যই রোগী সমেত। সেও আমাদের অনেকেই চান - "এ যদি শালা চীন হত"। করোনা রোগীরা সব মারা গেল, আমার বাড়ির কারুর কিছু হল না, আঘাত করলাম না, কিন্ত চাইলাম মারা যাক। সম্প্রতি আমার এক পোস্টে আমি এক বিপন্ন রোগীর সুস্বাস্থ্য কামনা করে মানুষের বিরাগভাজন। অবিশ্বাস করছেন কি কেউ, আমি স্ক্রিনশট পাঠাব মেসেজে। আ

মনন...30 thMarch 2020

হারিয়ে যেতে চাই **************** আজকাল সবই অচেনা লাগে। ট্রেনের হুইসল, বদলানো দৃশ্যপট, গোল্লাছুট খেলার মাঠ, অথবা বেলিফুলের গন্ধ বর্জিত গ্রীষ্মের সন্ধ্যা। হারিয়ে গিয়েছিলাম একবার বারোদোলের মেলায়, ফিরে পাওয়া ছেলেটা জানত,  মায়ের আঁচলে মুখ গুঁজে কাঁদার সময়, যে খুঁজে পাওয়ার পরেও তার একটা অংশ আর ফেরেনি। যেমন ফিরবে না আর তোমার একটি অংশ, আমাদের দেখা হওয়ার পর। তোমার সেই না থেকেও রয়ে যাওয়া স্বত্তার হাত ধরে,  অপ্রাসঙ্গিক নির্বাসনে আজও খুঁজে ফিরি,  সেই হারানো বালকের বিস্ময়ভরা চোখ। চৈত্রের দুপুরে,  ফাঁকা শহুরে রাজপথে মনে পড়ে কবে যেন আমিও শিশু ছিলাম। দুপুর কাটত কোকিলের ডাক শুনে,  স্বর্ণলতায় বকুলের মালা গেঁথে, আর শিমুল ফলের সশব্দ মোক্ষলাভে। আজ নিস্তরঙ্গ দীঘির জল কচুরিপানার গ্রাসে, আমাদের ভালোবাসায় রোজনামচার ক্লান্তি। আসছে বারোদলের মেলায় আবার আমি হারিয়ে যেতে চাই। একটা আমি আবার হারিয়ে যাক, আরেকটা আমি আবার মুখ গুঁজবে মায়ের আঁচলে, তেল হলুদ আর সার্ফের মিশ্রিত চেনা গন্ধের নিরাপত্তায়। দেবাঞ্জন বাগচী।

মনন...15th April 2020

শিয়ালদহে ফাইডিপিডিস ********************** সন্ধ্যার অপেক্ষায় শহর, অস্তগামী সূর্যের দিকে সে হেলান দিয়ে রইল চেয়ে। ভয়কে জয়ের খবর নিয়ে এ শহরে এসেছে দূরের শহর থেকে।  আশ্রয়, রেলের ওভারব্রিজ। উস্কোখুস্কো চুলে জমা কয়েক মাসের ধুলো, কাঁধের ঝোলায় এল ডোরাডোর নক্সা। লকডাউন শেষে আসন্ন পরের সফর, নীচের ট্রেনলাইন দিয়ে ট্রেন যায়না চব্বিশ দিন। একদা বিপ্লবের স্বপ্নে বিভোর বেলেঘাটা মেন রোডে দেখছে বসে ইমার্জেন্সির গাড়ি, ঝোড়ো হাওয়ার টানে কাটা ঘুড়ির অভিসার, ছাদের ওপর ছাদ,  আলোর গায়ে আলো, চারিদিকে এত আলো কেন! ময়লা বাটিতে খিচুড়ির অবশিষ্টাংশ, সূর্যাস্ত দেখে সে কবিতা বলেনা বহুকাল, নেই সঙ্গমকে বর্ণাঢ্য করার আসুরিক প্রয়াস। সেও কি জানে, এ শহরের ফুটপাথে ধর্ষণ হয়নি অনেকদিন? চারিদিকে শান্তি আজ, আরেক ম্যারাথনের আগে। শান্তির শহরে সে আরো একটা দিন, এখানেই বসে থাকতে চায়। দেবাঞ্জন বাগচী।

মনন...19thApril 2020

যে চিঠি তুমি পাওনি ****************** তোমাকে প্রথম চিঠি দেওয়া হয়নি। সেদিন আমরা অনেকটা পথ হেঁটে,  বসেছিলাম শীর্ন নদীর পাড়ে। তুমি বলছিলে কলেজের কথা, আমি হাওয়ায় কান পেতেছিলাম কুবো পাখির ডাকে। তোমার ঠোঁটের দিকে চেয়ে অথবা,  আমার হাতের লেখার কথা ভেবেই, প্রথম চিঠি দেওয়া হয়নি। দিনের শেষে সে আবার ফিরেছিল পেপারব্যাকের কাছে, আমার আর নিজের কাছে ফেরা হয়নি। অনেকদিন পর এক অলস অপরাহ্নে শীতের নরম রোদ খোলা চুলে মেখে, তুমিও নিজের কাছে ফিরে যেতে চাওনি। সেদিন পথ ভোলানো কবিতার ছত্রে, উষ্ণ কফির এক পেয়ালায় দু'জনে পাহাড়ি নদীর মতন ম্যান্ডোলিনের সুরে, মনে মনে ফিরেছি অজানা সব দেশে। তোমায় ফিরতে হয়েছিল বৃষ্টি নামার আগে, ক্লান্ত শহরে, শ্রান্ত দিনের ছন্দে পা মিলিয়ে। আজ ভোরে মনে পড়ল, তোমাকে আমার শেষ চিঠিও লেখা হয়নি। তোমার স্বরের খোঁজে আজও,  শুনে ফিরেছি অজস্র কুবো পাখির ডাক। তারা আমার না লেখা চিঠিও চেনে, কিন্ত জানেনা, তোমার ফিরে যাওয়ার কথা। মুখোশ পরা নাগরিকের ক্লান্ত পায়ে পায়ে,  ফিরেছে ফাঁকা শহরের পথঘাট! ম্যান্ডোলিনের সুরের খোঁজে নদী, কালবৈশাখী আমার চিঠি পায়। দেবাঞ্জন বাগচী।

মনন

সেদিন ও আরেকদিন ******************** একেকদিন ভোরের ঘুম ভাঙে,  কালো মেঘের জয়োদ্ধত নিনাদে। দেখে, প্রথম লগ্নের লালচে আকাশ আবার চাদরে মুখ ঢাকে ভোর। শেষ প্রহরের মেদুর স্মৃতি মাখা চাদর আর লাজুক হাসিতে, হয়ত আরো ক্ষণিক ভেসে থাকতে চায়। অনেকদিন, সূর্যাস্তের পর আকাশ সেজে ওঠে তোমার ব্রীড়ার সাজে। শেষ রশ্মিকে সে, চিলের ঘরে ফেরা অবধি ধরে রাখতে চায়। ক্লান্ত দিনের শেষে, তোমার চলার ছন্দে তখন মনখারাপের ছন্দপতন। যেভাবে, মোহনার আগে নদীও ফিরে আসতে চায়। মাথা নীচু করে ঘরে ফেরার পথে, ফেলে আসা এক শেষ প্রহরের আবেগে, আবার রক্তিম হয়ে হেসে ফেলার সময়, যদি ভাব অনেকদিন হয়নি দেখা, সেদিন একবার মাথা তুলে দেখ। সে'সব দিনে আমি চিলের সাজে, দেখি মোহনার জলে গোধূলির আল্পনা। আরেকদিন বৈশাখের দাবদাহে উত্তপ্ত মাটি,  মত্ত হয় বৃষ্টির কামনায়।  বৃষ্টির দীর্ঘ প্রতীক্ষাও একসময় অবসন্ন হয়, গুমোট সন্ধ্যার অমোঘ পদধ্বনিতে। মন্দিরে আরতির ঘণ্টা অথবা ঈশার আজান পেরিয়ে যেদিন,  তোমার ডাক শুনতে পাই। সেদিন মেঘমল্লার ছাড়াই বৃষ্টি,  মাটির জন্য শেষ প্রহর অবধি গান গায়। দেবাঞ্জন বাগচী।

নাগরিক দিনলিপি ১৪ :: পথের ওপারে..27th April 2020

****************************************** সুদীর্ঘ লকডাউন আমার কাছে বিকেলবেলাকে আবার প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। দুপুরে ঘর থেকে অফিসের কাজ সেরে, বিশ্রাম সেরে, বাসন মেজে মনটা অজান্তেই বাইরে চলে যায়। অনেক বছর আগে এভাবে স্যারের কাছে ড্রয়িং শিখতাম বিকেলে, মন তখন ফুটবল খেলার মাঠে চলে যেত। এখন ভোর থেকে উঠে ফ্ল্যাট পরিষ্কার, রান্না, জামাকাপড় কাচা ইত্যাদির মতন সূর্যাস্ত দেখাটাও রোজনামচায়। জোরে হাঁটতে হাঁটতে কখনও শুনি গান, কখনও অডিও বুক। অথবা ছাদে উঠে কোন কোনদিন পকেটে হাত দিয়ে আকাশ দেখা। শহরের ওপর অভিমান ভুলে আবার ফিরে আসা চড়াইয়ের দল, কালচে হতে থাকা নীল আকাশ, হলদে হতে থাকা সাদা মেঘের দল আর ঘুড়ি। আসলে নারকেল গাছগুলির মাথায় অনেক ঘুড়ি আটকে আছে, মহামারীতে নিরাপদ বাড়ির সদস্যরা অনেকেই ঘুড়ি ওড়ান। আমাদের বাড়ির নারকেল গাছেও আগে প্রায়ই এমন ভো-কাট্টা ঘুড়ি আটকে থাকত। এখানে ফ্ল্যাটের পাঁচিলের গায়ে বড় রাস্তা, ডানদিকে সূর্যাস্ত দেখা যায়। রাস্তার ওপারে সাদা রঙের বাড়িতে চোখ যেতেই চোখ পড়ল সেই বৃদ্ধার দিকে, কয়েকদিনে ও আবিষ্কার করেছি এই বাড়িতে বাস করেন এক বৃদ্ধা। উনি হুইল চেয়ারে বসে থাকেন, একজন ওঁকে হুইলচেয়ার ঠেলে ঠেলে

যেতে যেতে::১৪ ...21 May,2020

কিছু সূর্যাস্ত মনে রয়ে যায়, কিছু আলাপ জীবনকে নতুন করে ভাবতে শেখায়, কিছু পথ এক সফরে শেষ হয়না, সে'সব পথ মিলে যায় জীবনের সঙ্গে। ফিরে আসার পরেও কিছু সফর মানুষকে তাড়া করতে থাকে। আমাকে এভাবেই তাড়া করে সাঁওতাল পরগণা'র লোহারডাগা আর নেতারহাট।  সাঁওতাল পরগণা ... এক বিশাল ক্ষেত্র, আয়তনে যা ছিল কিছু দেশের চেয়েও বড়, বর্তমানে বৃটিশ আর ভারতীয়দের  আগ্রাসনে  নামই বদলে হয়ে গেল এক ছোট্ট রাজ্য- ঝাড়খণ্ড। আদিবাসীদের দেশে বেড়াতে আসার এক অদ্ভুত মাধুর্য আছে। এখানে কোন গন্তব্য নির্বাচন করে আসেন নি, তাই যেখানে যেখানে যাচ্ছেন সবই আপনার গন্তব্য। ঠগবাজেরাও আপনার চারদিকে ঘোরে না অথবা প্রচুর স্মারকের দোকানদার পণ্য নিয়ে পেছনে আসেন না।  এই পথে লোহারডাগা পেরিয়ে বুধন সিংহের চায়ের দোকানে বসে শোনা আদিবাসী কৌশল্যার ভালুক সংহারের গল্প বলেছিলাম যেতে যেতে ৩-এ। সেখান থেকে বেরিয়ে রাস্তা একসময় ঘাঘরা বলে একটি জায়গা থেকে বাঁ দিকে নেতারহাটের দিকে চলে যায়। বর্ষাকালে সবুজের সমারোহে সবই উর্বর জমি বলে মনে হয়, তবে মানুষের মুখ ও শরীরী ভাষা ধনের অসম বণ্টনের কথাই উচ্চস্বরে বলতে চায়। দূরে ভেসে ওঠে নেতারহাটের পাহাড়, মাথায় মেঘের পাগড়ি।