নাগরিক দিনলিপি ৫
একাদশীর দিন সকালে কলকাতার ক্লান্তিটা ধরা পড়ে। সারারাত ধরে জ্বলা স্ট্রীটল্যাম্পের আলো কেউ বন্ধ করতে আসেনি। পুজোর সময়ে এত আলো, তাও ওদের অব্যাহতি দেওয়া হয়নি। আজ আলোকসজ্জায় যখন সারা শহর ভেসে যাচ্ছে তখনও এরা দৃপ্ততার সঙ্গে দাঁড়িয়ে। চোখ ধাঁধানো আলোর পাশে হীনমন্যতায় ভুগছে না। চিরাচরিত শৃঙ্খলায় উজ্জ্বল। একই কোণে দাঁড়িয়ে আলো দিয়ে যাচ্ছে তার আত্মজ বৃত্তাকার অংশকে। যে কয়েকটি পাখি এদের সৃষ্ট আলোকদূষণের শিকার হয়ে কিচিরমিচির করে রোজ, তারা শব্দবাজির দাপটে পালিয়েছে। ওদিকে পথে কম যানবাহন। রাস্তা ফাঁকাই প্রায়। রাস্তা থেকে গবাদি পশু বা কুকুরগুলো জনজোয়ারে বিপন্ন হয়ে কোনো গলিতে বা এলাকাছাড়া। মাঝে মাঝেই পড়ে আছে ফানুসের কংকাল। আগের রাতেই যারা 'আকাশপ্রদীপ'-এর মতন কাব্যিক নাম পেয়েছিল। রাস্তার মোড়ে খবরের কাগজের দোকান এবং চায়ের দোকানগুলো বন্ধ। ফুটপাথও ফাঁকা। সন্ধেবেলা প্রতিমা নিরঞ্জনের পর ঠাকুরের বেদীতে প্রদীপ জ্বলতে দেখা যায়। সে দীপ্তি বড় করুন। হারানো মানুষের ফেরার আশায় মানুষের মনে যেভাবে আশার আলো জ্বলে, অনেকটা তেমন। তার শিখা থেকে বিষাদ ধার করে শহরের জড়পদার্থের গায়েও যেন মৃদু প্রাণের স্পন্দন।