Posts

দেবাঞ্জনের কবিতা (১)...27 th Nov 2017

Image
শংখচিল তিনযুগ পরে পরে আবার মিলেছে চোখ, মাঝে পেরিয়েছে হাজার মাইল পথ। ক্লান্ত পায়েরা অলস পদক্ষেপে, কেন খুঁজে নিল আবার তোমার ঘর! আমি তো চাইনি দেখাতে আমার মুখ! চেয়েছি দেখতে শুধু তুমি আছ কিনা। পরে আজও সেই সাদা পাটভাঙা শাড়ি, করুন গানের সুরে আটকালে পথ ? কালো পাড়-শাড়ী আজও কি তোমার প্রিয়? দলবেঁধে সবে এসেছ যে একই বেশে! নাকি ভেবেছিলে চিনতে করব ভুল, জাননা আমার আঁধারেই যাতায়াত?  লাল ঠোঁটে কেন মিলনের গান গাও! আমিই জানিনা আমার ভবিষ্যৎ। আজ ক্ষনিকের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছাসে, বুকে টেনে নিলে তিনটি যুগের পর? আলতা পায়েতে অতলের আহবান, দাওনা পেরতে উত্তাল জলরাশি। আমার পায়ের ক্লান্তি কি জান তুমি? এনেছে সে তোমাকে দেখতে একটিবার।

দেবাঞ্জনের কবিতা(২)..19th Feb 2018

Image
চৌরঙ্গীতে সন্ধ্যা ------------------------------ ভাষাদিবসের টানে ফিরে আসে, লাল শিমূল। মৌটুসি ফিরে আসে,  পলাশের কুঁড়ির ইশারায়। স্বভাবউদ্ধত বিবর্ণ ফুটপাথের ফাঁকে, সদর্পে উঁকি মারে দূর্বা। বাতিস্তম্ভ বেয়ে নীল আলোর মালা উঠে আসে নিয়নের নিশ্বাসের গন্ধে। সারিবিদ্ধ অট্টালিকার মার্জিত আলোর মালা, উচ্চতায় নিরাপত্তা পায়। ঘরমুখো কেরানী ক্লান্ত পদক্ষেপে, নৈশভোজের টানে। মন্দিরের ঘন্টা বাজে আবহমান ছন্দে, ছন্দেও তার ধূপের গন্ধ। রাজপথের সবুজ সিগনাল মাতোয়ারা হয় ফাল্গুনি হাওয়ার চিরাচরিত আনাগোনায়। তারামণ্ডল খোঁজে আকাশের গায়ে, তারা হয়ে যাওয়া স্বপ্ন। স্বপ্নের শোক কোলে বিচারপ্রার্থী মাতৃমূর্তি, অস্তমিত সূর্যের খোঁজে। তরমুজের রং যদিও লাল, তবু আজও স্বাদ বদলে নোনতা হয়নি। একফালি চাঁদে মেদুর রশ্মিরাগ পৃথিবীর মলিনতা মন্থনের অপেক্ষায়।

যেতে যেতে ২: 25 th Nov 2017

------------------- দু'পাশে ধূ ধূ মরুভূমির মধ্যে দিয়ে ছুটে চলেছে মধ্যপ্রাচ্যের সুপারফাস্ট হাইওয়ে। সবুজ বলে যে কিছু নেই তা নয়। আছে কিছু কাঁটাঝোপ আর বাবলা-জাতীয় গাছ। বাতানুকূল বাসের পর্দা সরিয়ে, আমার চোখ পেরোনোর চেষ্টা করছে দিকচক্রবাল। মনে পড়ে যাচ্ছে 'লরেন্স অফ আরাবিয়া' ছায়াছবির দৃশ্য। এমনই দিগন্ত থেকে একটি কালো বিন্দু দেখা যাচ্ছিল। সেটাই বড় হতে হতে দেখা দিল এক দুর্ধর্ষ ঘোড়সওয়ার, শরিফ আলি। কি দুর্দান্ত অভিনয় করেছিলেন ওমর শরিফ। সেই শরিফ আলির ভূূূমিকায়। ওদিকে সূর্যদেব অস্ত যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একটিও মেঘ এখানে বিদায়বেলায় ওঁকে টা টা করতে আসে না। সময়মত সূর্যকে রঙ বদলে লাল হয়ে যেতে হয়। তারপর জৌলুস হারিয়ে একসময় সে মিলিয়ে যাবে বালিয়াড়ির পেছনে। দিগন্তরেখার  এত কাছ অবধি সূর্য দেখা যায়না আমাদের দেশে। তারপরই বইতে থাকে ঠান্ডা বাতাস। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। আধঘণ্টার ফারাকে মনে হয় জ্যাকেট থাকলে ভাল হত। পাহাড়, নদী, সমুদ্র, অরন্যের মতন মরুভূমিরও এক সৌন্দর্য আছে। শুধুমাত্র চোখ নয়, ষষ্ঠেন্দ্রিয় দিয়ে তাকে অনুভব করতে হয়। এক খেজুরের ব্যবসায়ী বশির বলছিল, এ সৌন্দর্য সবার কাছে ধরা দেয় না। এই কাঁটাগা

যেতে যেতে ৪ : 7th July 2018

-------------------- সহপাঠী বলল - স্কুল নাই ডাকতে পারে। তার মানে আমরা যাবনা? মাথা চুলকে বললাম- তাহলে তো স্কুল পালিয়ে যেতে হয়! -ধেড়েখোকার ন্যাকামি দ্যাখ! পালাসনি নাকি কোনোদিন?  আমি তো এসব বিদ্যে তোর থেকেই রপ্ত করেছি। অত:পর পোষাক পরিবর্তন। যাত্রা শুরু। রেলগাড়ির ড্রাইভারের কাছে আবদার করলাম তাঁর কামরায় চড়ে যাব। কিভাবে চালানো হয় দেখব। প্রথমে না না করলেও রাজি হয়ে গেলেন। গন্তব্য গোটা পঞ্চাশ কি.মি. দূরের আরেক মফস্বল। আমাদের স্কুল এক বিজ্ঞান প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছে। তাতে কিসব মডেল বানিয়ে দর্শকমণ্ডলীকে মুগ্ধও করেছে। স্কুলে দেখতে গিয়ে বুঝছিলাম সেটা সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প বা কালিয়া দমন বা জনমেজয়ের সর্পসত্র যজ্ঞ বা হেবার পদ্ধতিতে এমোনিয়া উৎপাদন- সবই হতে পারে। তবে আমার জ্ঞানগম্যির বাইরে। আমাদের তাতে উৎসাহও নেই। বর্ষার দিনে অবৈধ ভ্রমনের নেশায় মাতোয়ারা।  দুজনেই। বিনা টিকিটে যাওয়ার মধ্যেও এক রোমাঞ্চ। কাজেই টিকিটের পয়সা থাকলেই বা কাটি কেন। ড্রাইভার নরনারায়ণ চট্টরাজকে বলিনি সেটা। গন্তব্যে পৌঁছে দেখি বিজ্ঞান মেলা শেষ, দুপুরেই সব স্কুলের ছাত্র চলে গেছে। আমরা? চলেছি যত্রতত্র। দুপুরে ক্ষিদে সময় সারণি মেনে হাজির

যেতে যেতে ৫ :: 22nd July 2018

------------------- দু'পাশে সবুজ বনভূমি আর আগাছার মধ্যে দিয়ে চলে গেছে পিচের রাস্তা। বর্ষাকাল।  তার সঙ্গে কাটাকুটি খেলতে খেলতে যাচ্ছে এক ন্যারো গেজ রেললাইন। লাইন দিয়ে ট্র্বেন চলে না বহুদিন। দু'পাশে সবুজ, কিন্ত চাষ হয়না। মাঝেমধ্যে নিমগাছ আর আগাছা দেখে উত্তরবঙ্গের চা বাগান বলেই ভ্রম হয়। উত্তরবঙ্গীয় জীবন এ অঞ্চলের তুলনায় অনেক মসৃণ। এখানে প্রকৃতি মানুষের কাছে ত্রাস। হয় খরা নয় বন্যা। মাঝে কিছু নেই, কারন মাটির জলধারন ক্ষমতা প্রায় নেই। ছত্তিশগড়। রায়পুর ছাড়িয়ে তেল নেওয়ার পর ড্রাইভার হিমেশ বলল কিছু খেয়ে নিতে। আগামী পেট্রোল পাম্প একশ' কিলোমিটার পেরিয়ে। শুনে আঁতকে উঠলাম। আজও এমন জায়গা আছে! অগত্যা সকালে চা সহ এক পেল্লাই বড়া নিয়ে গ্রাম্য দোকানে বসে গেলাম। শেষ পাতে জিলিপি আর গুলাবজামুন। এই বড়া কায়দা করতে আমার স্বাদগ্রন্থি আর স্বেদগ্রন্থি একজোট হয়ে প্রবল বাধা দিলেও খাবার না পাওয়ার ভয় তাদের নিরস্ত করল। সাময়িকভাবে। একটু পরেই ওরা খাঁটি প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল পাকস্থলীকে সঙ্গে নিয়ে। আরেকবার জেলুসিল এসে আমায় উদ্ধার করে। জীবনে এমন এক প্রেমিকা পেলাম না! লালচে ধূলো-কাঁকরের উত্তেজনা নিবৃত্ত হয়েছে বৃষ্

মনন..26 th Dec 2019

দিগন্তের ঘ্রাণ -------------------- জুঁইয়ের গন্ধ কি শীতের হাওয়ার সঙ্গী? মনে হয় আগেও ঠান্ডা বাতাসে এই গন্ধ পেয়েছি। সে অবশ্য, আগে আমি রামধনু হাতেও ছুটেছি দিগন্ত পেরিয়ে, তুমি ভাবছ সে তো বর্ষাকালের কথা! বর্ষায় তোমার চুলে সন্ধ্যা অবধি বাষ্প ধরা থাকে, সে গন্ধ বেতলার শাল গাছের নতুন পাতার মতন সবুজ। এখন সবাই ভাবছে আমি পরশপাথর খুঁজতে কোয়েলের উজানে যাচ্ছি, আসলে সবুজ রং ভালবাস বলেই আমি সবুজ দিগন্ত জিতে আনতে চাই। বেতলার বনে পিউ কাঁহা পাখির ডাকে আজ ঘুম ভেঙ্গেছে, বারান্দা পেরিয়ে বাগানের ঘাসে দেখলাম অজস্র শিশিরকনা। ভেজা ঘাসের শিশিরের সুবাসে আমার চটি আর পাজামা ভিজিয়ে এগিয়ে চললাম, রাস্তার পাশের ঝোপ থেকে একগোছা সবুজ আর লাল ফুল তুললাম। মেহেন্দি গাছে ঘেরা এক বাগান থেকে মাথা নাড়িয়ে কাঞ্চন আমায় ডাকলো । তারপর? গেলাম গোলাপের কাছে। বুনো গোলাপ, তবু কি সুন্দর গন্ধ ! শহরে গেলেও কি গোলাপে এই গন্ধ থাকবে? এমনিতে আমি ফুল তুলি না, আজ জান - আমি তোমার জন্য তোড়া বাঁধলাম! চিরাচরিত শৃঙ্খলায় নীলচে পাহাড় পেরিয়ে ডুব দিল সূর্য। অন্ধকার নেমে এসেছে, ঠিক তখুনি সেই গন্ধ পেলাম। তোমার না জুঁই ফুলের ভাবছি। তুমি এখানে নেই, তাও উৎস খুঁজ

মনন..10th Feb 2019

নীলের উজানে ----------------------- আজ আমি উজানে চলেছি, সে অতল পথ নাকি তোমারই হাত ধরে চেনা! সাহারার শুকনো বাতাস সকালের নরম রোদে, তোমার গন্ধ এনে দিল। পাশ দিয়ে যাওয়া রেলগাড়ি, তোমারই রং মেখে উজ্বল হতে চায়। কাল রাতে তারা ভরা আকাশের নিচে দাঁড়ালাম, অথবা। ছায়াপথ আমায় ঘুম থেকে ডাকল! দেখলাম একঝাঁক তারা এসেছে আমার দরজায়। ওরা বলে গেল এ পথ নাকি আমাদেরই চিরকাল! আজ তাই আমি আবার উজানে চলেছি, চেনা আবর্তে, চেনা স্পর্শে।  অচেনা উত্তেজনায়। দিনের আলোয় আমি পথ চিনতে পারিনা। রাতের তারারা কি আমায় পথ দেখিয়ে তোমার কাছে নিয়ে যাবে?